অধ্যক্ষের বানী
الحمد لله رب العالمين - الصلواة والسلام على سيد المرسلين وعلى اللهواصحابه وأهل بيته وأولياء امته وعلماء ملته اجمعين
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!
মানুষের নৈতিক উন্নতিতে দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নাই। বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার ডামাডোলে মানুষের নৈতিক অধঃপতন, নিষ্ঠুরতা, একের উপর অন্যের প্রাধান্য বিস্তারের উদগ্র বাসনায় বিশ্ব পরিবার আজ চরম বিভীষিকাময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পদদলিত হচ্ছে আজ মানবাধিকার; লাঞ্চিত-বঞ্চিত আজ মানবতা। যে জ্ঞান- বিজ্ঞান মানুষকে নৈতিকতার পরিবর্তে উশৃঙ্খলতায় উদ্বুদ্ধ করে, কোটি কোটি মানুষকে বুভুক্ষ রেখে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে মানুষ মারার মারণাস্ত্র তৈরী করে, সেটাকে আর যাই বলা যাক সভ্যতা ও উৎকর্ষতা বলা যায় না। পবিত্র কুরআন- হাদীসের শিক্ষা এবং আমলের অনুপস্থিতিতে শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা আজ নিষ্পেষিত, নির্যাতিত। নিপীড়িত মুসলমানদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস আজ ভারী হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিন্তা-চেতনায় মুসলমানরা আজ তাদের দুশমন দ্বারা প্রভাবিত। অথচ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক উন্নতি, উৎকর্ষতা, সামজিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের রয়েছে গর্বিত ও নন্দিত ইতিহাস। বড়ই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, মুসলমানদের সেই ইতিহাস আজ শুধুই ইতিহাস। সেই ইতিহাস পুনরুজ্জিবিতকরণে এবং অশান্ত বিশ্ব পরিবারে শান্তির শ্বেত কবুতর আবার ডানা মেলে উড়ানোর জন্য মুসলমানদের মনে উল্লেখযোগ্য কোন চেতনা-বাসনা লক্ষ্য করা যায় না। এর প্রধান কারণ দ্বীনি শিক্ষা ও চেতনার অনুপস্থিতি, অপ্রতুলতা ও ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা।
আগত ভবিষ্যতে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ইসলামী ঐতিহ্য লালন ও পরিস্ফুটনের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মহান আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর হাবীব (দ.) এর সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে সুলতানুল ওয়ায়েজিন পীরে তরিকৃত শাহ্ সূফী আহছানুজ্জামান (র.) এর অছিয়ত, দোয়া ও বদান্যতায় এবং এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ছাইয়েদুনা গাউছে পাক (র.) এর করম নওয়াজির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডস্থ কুলগাঁও-এ ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় "আহছানুল উলূম জামেয়া গাউছিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিমখানা"। বর্তমানে ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণী হতে মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর কামিল পর্যন্ত শ্রেণীর কার্যক্রম বোর্ড ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত অধিভুক্ত হিসেবে চালু আছে। ২০০৭ইং সন হতে মাদ্রাসা শিক্ষার ফাযিল স্তরকে স্নাতক সমমান এবং কামিল স্তরকে স্নাতকোত্তর বা এম.এ এর সমমান প্রদান ইসলামী বিশ্ববিদ্যারয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। উন্নত ফলাফল ও পড়াশোনার সার্বিক মানোন্নয়নের ফলে মাদ্রাসাটি শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা হিসেবে বোর্ড হতে জাতীয় পর্যায়ে দু'টি কম্পিউটার পুরস্কার লাভ করে। কামিল পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীতে পাঠদানের জন্য বর্তমানে মাদ্রাসায় কর্মরত মুহাদ্দিসীন, মুদাররেসীন, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা সর্বমোট সংখ্যা ৩৮ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ৩ জন ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ৭ জন। পবিত্র কুরআন, হাদীস, আরবী ও ফিকহ বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী, ইসলামের ইতিহাস, গণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার প্রভৃতি বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক মণ্ডলী দ্বারা পাঠদান করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানচর্চা এবং মেধা বিকাশে সমৃদ্ধ পাঠাগার ও বিজ্ঞানাগার সহ কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে।
মুসলিম মেয়েদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করে আদর্শিক দীনতা নৈতিক বিপর্যয় থেকে মুসলিম উম্মাহর ভাবী বংশধরকে রক্ষা করতে প্রথম শ্রেণী হতে দাখিল ও আলিম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ ও সাধারণ বিভাগে "সহ-শিক্ষা" রয়েছে। পবিত্র কুরআন মাজীদের হাফিজ তৈরীর লক্ষ্যে রয়েছে হিফজখানা। ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক মানোন্নয়ন ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের রয়েছে বিভিন্ন সহপাঠ্য ক্রমিক কার্যাবলী। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাবীবে কাওনাইন (দ.) এর উসীলা নিয়ে দোয়া করি যাদের সার্বিক সহযোগিতায় এ আদর্শ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে, আল্লাহ্ তায়ালা যেন তাদের সকলকে উভয় জাহানে উত্তম প্রতিদানে পুরস্কৃত করেন। আমীন! সুম্মা আমীন।
অধ্যক্ষ, মাওলানা কাযী মুহাম্মদ আবুল বয়ান হাশেমী
কুলগাঁও, জালালাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামী, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৭১১-১২২২৪২
ই-মেইল : ahsanululum1964@gmail.com